You can access the distribution details by navigating to My pre-printed books > Distribution
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূত্রপাতের পূর্বকালে শেষবার যখন সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে একটি থিয়েটার অথবা রঙ্গভূমির মতো একক ধরে নিয়ে কোনো বিস্তৃত বর্ণনা প্রদান করা হয়েছিল, সে ছিল প্রাগৈতিহাসিক কাল। যে কোনো মননশীল মানুষের নিকট এটি একটি অবাক করা তথ্য রূপে প্রতিপন্ন হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, প্রাগৈতিহাসিক ভারতীয় রচনাসমূহের অন্যান্য অনেক দিকের মধ্যে সেই উপলব্ধি অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবীদের অনেক সদস্যকে অবাক করেছিল।
অপর সমস্ত বিবেচ্য বিষয়ের ঊর্ধ্বে, ৫০ লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও অধিক আয়তনের একটি ভূখণ্ডকে একটি একক রঙ্গভূমি রূপে বিবেচনা করার নিমিত্ত বর্তমান মানুষের বিচারেও উচ্চ স্তরের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রয়োজন। আধুনিক মানুষ যাকে প্রাগৈতিহাসিক কাল রূপে বিবেচনা করে, তা প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত নয়। বর্তমান সময়ের স্কুল স্তরের পাঠ্যপুস্তকে শেখানো হয় যে সেই সময়ে, মানুষ সবেমাত্র পাথরের তৈরী বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যাদির ব্যবহার আবিষ্কার করতে শুরু করেছিল।
মুঘল সাম্রাজ্যের সময় কালে ইউরোপীয়রা যে ভারতবর্ষকে দেখেছিল, সেখানে এমন কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি যার দ্বারা মনে হতে পারত যে সেই সমাজ কোনো প্রযুক্তিগতভাবে অতি উন্নত সমাজের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। ভারত নামে পরিচিত ভূভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাগৈতিহাসিক ভারতীয় রচনাসমূহের নানা খন্ডিতাংশ, নানা সংস্করণকে সংগ্রহ করে সেগুলিকে সম্পূর্ণ রূপ দেওয়ার প্রয়াস করেছিলেন একদল ইউরোপীয়ান। সেই প্রচেষ্টা পল্লবিত হয়ে শেষ পর্যন্ত এশিয়াটিক সোসাইটির রূপ ধারণ করে। এক দখলদার শক্তি হওয়া সত্ত্বেও কমপক্ষে এক শতাব্দীরও অধিক সময় ধরে ব্রিটিশরা সেই উদ্দেশ্যে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদ বরাদ্দ করেছিল। খুব নিবিড়ভাবে সেই কর্মকান্ডকে অনুধাবন করার চেষ্টা করলে দেখা যায় সেইসব মানুষকে অবগুন্ঠনের আড়ালে থাকা কোনো এক কিছু আকর্ষণ করেছিল, অমোঘভাবে। অবগুন্ঠনের আড়ালের সম্মুখভাগে ছিল কিছু নতুন আঙ্গিকের দর্শন ও কিছু বিদ্যা, যা ছিল সেই সময় পর্যন্ত ইউরোপীয়দের নিকট অজানা।
সেই সকল কিছুই আবর্তিত ছিল জাগতিক বিশ্বের কাঠামোবদ্ধ এক ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে। সেইসব রচনার মূল কাঠামো যুক্তির অটুট বন্ধনে আবদ্ধ। সেই প্রকার উপলব্ধি কোনো কাহিনীকারের কল্পনার ফল হতে পারে না। অবাক করা ঘটনা হল যে প্রাগৈতিহাসিক কালের রচয়িতাগণ কিভাবে সেই উপলব্ধি হাসিল করেছিল? আরও অবাক করা ঘটনা হল যে সেই সমাজ বা তার প্রতিভূ অথবা ধ্বজাধারীরা গেল কোথায়?
একথা স্পষ্ট যে সেই সমাজের কোনো অস্তিত্ব সেই ভারতে খুঁজে পাওয়া যায়নি, যে ভারতে ইউরোপীয়রা গত সহস্রাব্দের মধ্যভাগে দলবদ্ধভাবে এসে উপস্থিত হয়েছিল। প্রাগৈতিহাসিক ভারতীয় রচনাসমূহের মধ্যেই নিহিত আছে যে সেগুলি আবির্ভূত হয়েছিল কোথা হতে ও কিভাবে। কিন্তু, প্রাচীনতার সেই পর্যায়কে বর্তমানের সাথে যুক্ত করা যায়নি। যদি ধরে নেওয়া হয় যে সেই রচনাগুলি কোনো গল্পকারের রচনা নয়, সত্যি সত্যিই এক গভীর মনন ভিত্তিক প্রক্রিয়া অথবা গবেষণার দ্বারা সৃষ্ট এক দর্শনকে ভিত্তি করে সৃষ্ট ও আবর্তিত হয়েছে তবে সেই সময়কাল বর্তমান মানুষের জ্ঞাত ইতিহাসের পরপারে হওয়াটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন ওঠে, মাঝখানের সময় গেল কোথায়? সময়ের সেই দুই পর্যায়কে কি যুক্ত করা সম্ভব? আবহমান কাল হতে মানুষ চেষ্টা করে আসছে সম্মুখে উপস্থিত অব্যাখ্যাতকে যুক্তিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।
বাংলাকে ভারতের থেকে পৃথক করে দেখা সম্ভব নয়। বাংলার অতীত ভারতের অতীতের থেকে কোনো ভাবেই পৃথক নয়।
এই পুস্তকটিতে বাংলার অতীতের অভিমুখে নারুর মনননির্ভর যাত্রার বিবরণ পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে, সেই যাত্রা রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় বর্ণিত ‘সাহিত্যে লিপিবদ্ধ জনপ্রবাদ’ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। বাকী ছিল দুই প্রান্তকে অর্থাৎ ইতিহাসকে বর্তমানের সাথে যুক্ত করার কাজ। নারু ঝাঁপিয়েছিল সেই উদ্দেশ্যে। এই পুস্তকটি সেই প্রয়াসের প্রথম অংশ।
Currently there are no reviews available for this book.
Be the first one to write a review for the book বাংলার উৎপত্তি চতুর্দশ পর্ব বাংলা পরমানবগণের ক্রীড়াভূমি.