পেশায় প্রাক্তন নার্স্ (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নার্সিং ডিরেক্টরেটে সিস্টার্ টিউটর্ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত); নেশায় সত্য জ্ঞান ও মানবতার উপাসক শুক্লা চক্রবর্তি মৌলিক সাহিত্যের আঙিনায় গাছের ছায়ার মতো স্নিগ্ধ এবং নির্মল এক অনুভূতির নাম। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা নদীয়া জেলার চাকদহ শহরে। বর্তমান নিবাস ব্যারাকপুর। ছোটবেলার ভালবাসা—গান, গল্পের বই। বড় হতে হতে প্রিয় হয়ে ওঠে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন। স্কুল জীবনে মেধাবী বলে পরিচিতি থাকলেও পড়াশুনা কোনওদিনই মসৃণ গতিতে হয়নি। এইচ্ এস্ পাশ করে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হলেও পরিবারের প্রয়োজনে পড়া ছেড়ে সাড়ে তিন বছরের ডিপ্লোমা ইন্ নার্সিং মেডিক্যাল্ কলেজ্ হাসপাতাল থেকে পাশ করে সরকারি চাকরির সাথে সাথেই নিজের ভালবাসার বিষয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন। কঠোর পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্নাতক এবং প্রিয় বিষয় ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের স্বপ্ন ছিল মাস্টার্স ইন্ মিউজিক্। প্রফেশনাল্ এডুকেশনের জন্যও যথেষ্ট প্যাশন্ থাকলেও, যা তুলনায় আরও একটু বেশি সুযোগ ও কষ্টসাধ্য ছিল। ততদিনে ছোট বাচ্চার মা হিসেবে দায়িত্ব অনেক বেশি ছিল কিন্তু পরিবারে সাহায্যকারী কেউ না থাকায় চাকরি রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছিল! মাঝখানে অনেকদিন চলে গেলেও অবশেষে ওয়েস্ট্ বেঙ্গল্ ইউনিভার্সিটি অব্ হেলথ্ অ্যান্ড্ সায়েন্সের আন্ডারে পোস্ট্ বেসিক্ বি এস্ সি (অনার্স) ইন্ নার্সিং করতে পেরেছেন কিন্ত বয়সের সীমাবদ্ধতায় এম্ এস্ সি ইন্ নার্সিং আর হয়নি। ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে পড়াশুনা না হওয়ার একটা কষ্ট উনার আজীবনের সঙ্গী! জীবন ও প্রকৃতি ছিল লেখার মূল প্রেরণা। পরিণত বয়সে লেখার প্রিয় বিষয় ভারতবর্ষের জীবন-দর্শন ও গভীর অধ্যাত্মবাদের বিজ্ঞান-ভিত্তিক বিশ্লেষণ। জীবিকা সূত্রে প্রত্যক্ষ করা বাস্তব অভিজ্ঞতা লেখিকার লেখার আগ্রহ ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছে ভীষণ। প্রতিদিনের দেখা প্রকৃতি যা ছুঁয়ে গেছে হৃদয়-মন...তারই প্রতিফলন হয়েছে সাদা পাতায়। কখনও বা কলমের আঁচড়ে রক্তাক্ত হয়েছে জীবন থেকে পাওয়া অপমান, অসম্মান! নিজেকে প্রকাশ করতে সতত কুন্ঠিত, তবু গুটিকয় বন্ধুজনের উৎসাহে ও প্রেরণায় বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পত্র-পত্রিকায়; যেমন—“নবান্ন”, “তথ্যকেন্দ্র”, “কোজাগর”, “তত্বমসি” প্রভৃতি। লেখিকার প্রকাশিত দু’টি কাব্যগ্রন্থ, যথাক্রমে—“আমি অনুপমা” (২০১৫) এবং “খোলা জানালা” (২০২১)। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগিতায় পশ্চিম বঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কবিতা বিভাগে ২০০৩ সালে পাওয়া শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জীবনের এক সোনালী অভিজ্ঞতা লেখিকার।