You can access the distribution details by navigating to My pre-printed books > Distribution
বহির্বিশ্বের বহু পর্যটক ভারতবর্ষে এসেছিলেন ভারতবর্ষকে জানতে অথচ আজ ভারতবাসীর সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্য যে ভারতে বসবাস করবো কিন্তু ভারতকে জানতে পারবো না। ভারত জানার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা এই জানার জন্য যেটুকু দরজা খোলা রাখা হয়েছে সে দরজা দিয়ে শুধু ভুলভাল তথ্যগুলো ই ঢুকছে এবং ভারতবাসীর জীবনকে আরো বিকৃত ও বিপর্যস্ত করে তুলছে। অন্তঃ কিম্?
কবে দেশটার নাম ছিল জম্বুদ্বীপ, কি করে হল বিন্ধ্য পর্বতকে মাঝে ধরে নিয়ে উত্তর অংশের নাম হল উত্তরাপথ ও দক্ষিণ অংশের নাম হল দাক্ষিণাত্য, কেন দেশটাকে হিন্দুস্থান বলা হয়, কেনই বা ইন্ডিয়া-- এ সব প্রশ্ন স্বাভাবিক, কিন্তু উত্তরগুলো অনেক সময় ভারতবিরোধী। ধর্ম শব্দের অর্থ কি, বর্তমানে ধর্ম শব্দটি কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং কি সমস্যার সৃষ্টি করছে, তার উত্তর বড় জটিল। যা পূর্বে ছিল এখন নেই তা প্রাক্তন, যা পূর্বে ছিল না এখন হয়েছে তা নূতন, যা পূর্বে ছিল এখন আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে তা সনাতন। সনাতন শব্দের প্রকৃত অর্থ বার করা মুসকিল। তবুও বলা যায় সনাতন মানে শাশ্বত চিরন্তন নিত্য, স্মরণাতীত কল্পনাতীত কাল পূর্ব হতে আজ পর্যন্ত অবিরাম অস্তিত্বশীল। এই সনাতন ধর্ম তথা মানুষের নিত্য ধর্ম কিভাবে হিন্দু ধর্ম নাম পেল এবং কত কাল ধরে কিভাবে এই হিন্দু ধর্মের বিবর্তন তা জানবার ও জানানোর মহান ব্রতের আত্মপ্রকাশ এই বই-- হিন্দু ধর্মের গোড়াপত্তন।
যখন ধর্ম শব্দটির জন্ম হয় তখন আজকের অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি। ধর্ম শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে সৃষ্টিকে, সৃষ্টিকর্তাকে মানুষকে মনুষ্যত্বকে সমন্বয় করতে যে বিশ্বাস আচরণ ও আকুতিকে বহন করা হয় তা। এ কারণে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের প্রতি মুহূর্তের চলা বলা, অন্নবস্ত্রবাসস্থান, আনন্দউৎসব, ভাষা, চিন্তাভাবনা জীবিকা সমস্ত কিছু ই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হত। ধর্ম জীবনাচরণ এর বাইরে মঠে মন্দিরে যাওয়া নয়, বিশেষ দিনে পাঁজি দেখে পুরোহিত ডেকে আনুষ্ঠানিকতা নয়, ধর্ম মানুষে উত্তরণ হওয়ার সাধনা, ধর্ম অন্তরচারী মনের মানুষটাকে চেনা, ধর্ম সম্পুর্ন রূপে আত্মোপলব্ধি- আত্মানং বিদ্ধি - আত্মোদীপো ভব। আমরা মাঝে মাঝে যখন এই ধারণা থেকে সরে এসে সমন্বয়ের বদলে ভেদবুদ্ধির চৌহদ্দি রচনা করি অথবা অনুষ্ঠানসর্বস্বতায় পা বাড়াই, তখনই ধর্মে গ্লাণি প্রবেশ করে, অধর্ম মাথা তোলে, সাধুরা নির্যাতিত হয়, তখনই মানুষের মাঝে কেউ একজন ঈশ্বর হিসাবে প্রকাশ পান, আবার ধর্মের অভ্যুথান ঘটে। ভারতীয় এই সনাতন মহাভাবনার মহাসংকলন হচ্ছে বেদ। বেদ -- ভাষার উৎস, বিজ্ঞান এর উৎস, দর্শন এর উৎস, রসায়ণ-চিকিৎসাবিদ্যা, সঙ্গীত-নৃত্য-বাদ্যাদির উৎস।
বৈদিক শাস্ত্রাদি রচনা তথা সংকলন কাল এর পর্যায়ের এক কেন্দ্রীয় প্রাণপুরুষ যাজ্ঞবল্ক্য। যাজ্ঞবল্ক্য এর ভাবনায় কখনো জীবনবিমুখতা নেই। নারী ও প্রেমকে তিনি গৌরবে মন্ডিত করে দেখেছেন। জ্ঞানের সম্ভাবনা সম্পর্কে তার ধারণা অনন্ত। ক্ষত্রিয়কেও তিনি জ্ঞানে ব্রাহ্মণ অপেক্ষা বৃহত্তর ভাবতে পারেন, আবার সেই তিনিই ব্রহ্মবিদ্যা আলোচনায় রাজর্ষিকে ধন্য করেন। গোকামনা, ধনলিপ্সা স্বীকার করতে, এগুলো বাস্তবে প্রয়োজন তা মেনে নিতে যাজ্ঞবল্ক্যের কোনো দ্বিধা নেই উপযুক্ত পুত্র কন্যা লাভের স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষাকে তিনি মেনে নিয়েছেন, গৃহবধূর যৌন জীবনের স্খলনকে উগ্রভাবে আক্রমণ না করে পাপ স্বীকার ও অনুতাপ এর দ্বারা প্রতিকার নির্দেশ করেছেন, ক্ষুধা ও মৃত্যুকে পরম শত্রু বলে অভিহিত করেছেন। এক কথায় রক্তমাংসের দোষগুণের স্বাভাবিক ঐহিক জীবনকে স্বীকার করে মানুষকে মহত্ত্বে ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর পরেও নিন্দুকরা এই উদার ধর্মকে যখন ব্রাহ্মণ্য ধর্ম নামে সংকুচিত করতে চান তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন ওঠে। সেইসব প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করেছে -- এই অনবদ্য গ্রন্থটি। পাঠকের কাছে গ্রন্থটি সমাদৃত হলে গ্রন্থকার এর শুভ প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে মনে করি। ---- কমলেন্দু ভট্টাচার্য, জাতীয় শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, কবি, সাংবাদিক, পাঁচালীকার ।
Currently there are no reviews available for this book.
Be the first one to write a review for the book হিন্দু ধর্মের গোড়াপত্তন Hindu Dharmer Gorapattan.