You can access the distribution details by navigating to My pre-printed books > Distribution
ভারতের, বিশেষতঃ বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে কালাপানি শব্দটির ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক বড় অধ্যায়ে এর উল্লেখ অপরিহার্য। ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে অতি বিপজ্জনক রূপে চিহ্নিত মানুষদের মূল ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের সীমানার নিকটে অবস্থিত আন্দামানের সেলুলার জেলের কাল কুঠুরিতে আবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নির্মিত হওয়া সেলুলার জেল নামক কারাগৃহটি কালাপানির সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলা ভাষায় এই শব্দের সংযোজন হয়েছে তুলনামূলকভাবে নবীন কালে। বাংলা ভাষার মূল কাঠামো এসেছে সংস্কৃত থেকে। বাংলার নবজাগরণের কালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও অন্যান্য পন্ডিতগণের প্রচেষ্টায় সেই ভাষার মূল কাঠামো প্রায় সংস্কৃতের স্তরে উন্নীত হয়। কি সেই উন্নত স্তর? সেই স্তরের মূল পরিচিতি হল মূলের সন্ধান। শব্দের উৎপত্তি হতে হবে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে। স্বাভাবিকভাবেই, কোনো শব্দের উৎপত্তির ধারা অনুসরণ করলে শেষ পর্যন্ত বর্ণমালার উৎপত্তির ও সেই পথে জগতের সৃষ্টির জ্ঞাত ধারণার মূলে পৌঁছানো সম্ভব। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে এমন অনেক অভিব্যক্তির প্রয়োজন পড়েছে যা সংস্কৃতের প্রাচীন শব্দভাণ্ডারে উপস্থিত নেই। নতুন মানুষের ঢেউ এর সাথে, অন্যান্য সমাজের সাথে যোগাযোগের হাত ধরে, নতুন নতুন শব্দ বাংলা ভাষায় সংযোজিত হয়ে চলেছে; সে অনেক কালের কথা। সেইসব শব্দ কোন নিয়ম মেনে সৃষ্টি হয়েছে তা জানা যায় না। কেবলমাত্র তাদের অর্থ জানা যায়। সেই কারণে, শব্দের বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের উৎপত্তির সূত্র পাওয়া সম্ভব নয়। কালাপানি এমনই একটি শব্দ। বাংলায় এর আবির্ভাব কাল নির্ধারণ করা সম্ভব সহজেই।
সাম্প্রতিক কালে আবির্ভূত এই শব্দের উদ্ভব কোথা থেকে সেকথা মনে জিজ্ঞাসার উদ্রেক করে। বাংলার শিক্ষামহলে যেমনটি পড়ানো হয়েছে তেমন ভাবেই কি সমুদ্রের জলের কালো রঙের ওপর ভিত্তি করে এই শব্দের উদ্ভব? গভীর সমুদ্রের কালো জল কালাপানি শব্দের উৎপত্তির কারণ হলে সমস্ত মহাসাগরগুলিকে কালাপানি বিশেষণ দ্বারা ভূষিত করা হত। সেরকমটা হয়নি। উত্তর ভারতের মূল ভাষা হিন্দিতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকা এই শব্দের সাথে সমুদ্রের জলের রঙের কোনো সম্পর্ক নেই সেই ভাষায়। সেই ভাষায় এই শব্দ স্থান-নাম সূচক। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী সমুদ্র ব্যতীত ভারতের অপর একাধিক স্থানের নামের সাথে ‘কালাপানি’ শব্দ জড়িত থাকার উদাহরণ প্রকট ভাবে বিদ্যমান।
জলকে নির্দেশ করার জন্য ‘পানি’ শব্দের ব্যবহার সংস্কৃতে নেই। এই শব্দ চালু হয়েছে পরবর্তী সময়ে। সংস্কৃত ক্রিয়াপদ ‘পান করা’ থেকে পানি শব্দের উদ্ভব হওয়া সম্ভব। যা পান করা হয়, তা পানি। সমুদ্রের জল পান করার অযোগ্য, তাও তাকে পানি বলা হয়েছে। সেই প্রয়োগ সংস্কৃতের রচয়িতা-কর্তাগণের উচ্চমানের ভাষা নির্মাণের পরিচায়ক নয়। গভীর সমুদ্রের জলের রঙ ব্যতীত অপর কোনো বৈশিষ্ট্য কি কালাপানি শব্দের উদ্ভবের ভিত্তি রচনা করে?
নারুর মনে দৃঢ় ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে কালাপানি শব্দের উৎপত্তির যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা বাংলা তথা ভারতের অতীতের ওপর আলোকপাত করতে পারে। ‘বাংলা’ শব্দটির উৎপত্তির ভিত্তির জীবনব্যাপী অনুসন্ধানে রত নারু, কালাপানি শব্দের একটি অশ্রুতপূর্ব ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়ায় তা এই পুস্তকের মাধ্যমে জনসমক্ষে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
Currently there are no reviews available for this book.
Be the first one to write a review for the book বাংলার উৎপত্তি ( চতুর্থ পর্ব ) কালাপানি.